Skip to main content

বঙ্গন্ধুর ভাষণ ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫


বঙ্গবন্ধু,  তিনি বাংলাদেশ, তিনি আমাদের জাতির পিতা, আমার ভালোবাসা।  আমার  দৃস্টিতে ভালোবাসার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উপায় হলো তার জন্য কোন কাজ করা।  তার কথা অনুযায়ী নিজের জীবন গড়ে তোলা।  সে অনুযায়ী ভাবলাম বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে তাঁর জন্য কাজ করব, সময় ব্যয় করব।  কি করব তা ভাবতে ভাবতে মনে হলো বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ  একটি ভাষণকে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি।  সে ভাবনা থেকেই এ কাজটি করা।
 ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়, কুমিল্লা সেনানিবাসে অস্থায়ীভাবে নিমির্ত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রাঙ্গণে।  সেই প্যারেডে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  
বঙ্গন্ধুর ভাষণ ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫  
‘মনে রেখো, শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।  তুমি যখন শাসন করবা সোহাগ করতে শেখো।  তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়িও। তাদের ভালোবেসো।  কারণ, তোমার হুকুমে সে জীবন দেবে।  তোমাকে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে।  সে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে তোমাকে শৃঙ্খলা শিখতে হবে।  নিজকে সৎ হতে হবে, নিজকে, দেশকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে কোনো ভালো কাজ করা যায় না।  আমার মুখ কালা করো না, কারণ দেশের মুখ কালা করো না।  সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখ কালা করো না।
তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো।  মনে রেখো, মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।  মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই।  এত রক্ত দেওয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই।  এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে।  দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত  এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী।  কিন্তু আর না।  
বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি।  এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।  কাল যখন আমি আসতেছিলাম ঢাকা থেকে, এত দুঃখের মধ্যে না খেয়ে কষ্ট পেয়েছে, গায়ে কাপড় নাই, কত অসুবিধার মধ্যে বাস করতেছে, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে দেখবার জন্য।  আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি, তোমরা আমাকে এত ভালোবাসো কেন? কিন্তু যেই দুখী মানুষ দিনভরে পরিশ্রম করে, তাদের গায়ে কাপড় নাই, তাদের পেটে খাবার নাই, তাদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত নাই, লক্ষ্ লক্ষ্ বেকার, পাকিস্তানিরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে, কাগজ ছাড়া আমার কাছে কিছু রেখে যায় নাই। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়।  আমি শুধু এমার্জেন্সি দেই নাই, এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যদি ২৫ বৎসর এই পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহাম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি, আর আমার ৩০ লক্ষ্ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয়ই ইনশাআল্লাহ পারব। 
এই বাংলার মাটি থেকে এই দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর, এই মুনাফাখোরী এই চোরাচালানকারীদের নির্মূল করতে হবে।  আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো।  
আর না, অসহ্য হয়ে সীমা হারিয়ে ফেলেছি।  এইজন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই।  এই জন্য শহীদরা রক্ত দিয়ে যায় নাই।  কয়েকটা চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, ঘুষখোর দেশের সম্পদ বাইরে বাইর করে দিয়ে আসে, জিনিসের দাম গুদাম করে মানুষকে না খায়া মারে।  উৎখাত করতে হবে বাংলার বুকের থেকে এদের।  দেখি কতদূর তারা টিকতে পারে।  চোরের শক্তি বেশি না ঈমানদারের শক্তি বেশি, সেটাই আজ প্রমাণ হয়ে যাবে।’

Comments

Popular posts from this blog

Colonel Tate of the Pakistan Army addressing surrendered Pakistani troops

BANGABANDHU BRINGS KAZI NAZRUL ISLAM FROM INDIA

I THINK ITS A GREAT ACHIEVEMENT FOR BANGLADESH & BENGALI CULTURE. A LOT OF THANKS OUR LEADER FOR GIVING CITIZENSHIP OF KAZI NAZRUL ISLAM.

CREDIT OF JUSTICE SHAHABUDDIN AHMED